রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
মো.নাহিদুল, কলাপাড়াঃ কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে গেস্ট হাউসে পরিণত করেছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টির একটি ভবনের বেশ কয়েকটি ক্লাসরুমকে গেস্ট হাউসে পরিণত করে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। তার আবার নাম দেয়া হয়েছে ‘কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউস’। দীর্ঘদিন ধরে এই বাণিজ্য সবার চোখের সামনেই চলছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের দাবি, তারা এমন কোনো তথ্য জানেন না।
এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সোমবার (১০ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বি বি গেস্ট হাউসটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা করে নেয়া হয়। অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার সময় নেয়া হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মসজিদ চাঁদা, কোচিং ফি, বেতনসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে এসব টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া এই বিপুল অঙ্কের অর্থের কোনো সঠিক হিসাব নেই স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে। কেউ জানেন না, কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে এসব টাকা। এরই মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মনীতি উপেক্ষা না করে বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটিকে গেস্ট হাউস বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এই গেস্ট হাউসের ভাড়ার টাকা কোথায় যায় কিংবা কী খাতে ব্যয় হয়, তারও কোনো সঠিক হিসাব নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।
পর্যটকদের সঙ্গে কথোপকথনে জানা যায়, স্কুলের একজন স্টাফ পর্যটকদের ডেকে এনে রুম ভাড়া দিয়েছেন। তাদের রুমের চাবির রিংয়ে ‘কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউস’ লেখা। এতে পর্যটকরাও কিছুটা বিব্রত।
স্থানীয়দের অনেকে জানান, কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধু বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবনে প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান নার্সারি স্কুল খোলেন। পরে অভিভাবক ও স্থানীয়দের চাপের মুখে দুই বছর ধরে স্কুলটি বন্ধ।
সরেজমিন দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জেলে ও দিনমজুর। তারা স্কুলের ধার্যকৃত অতিরিক্ত ফি দিতে গিয়ে হিমশিম খান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, সরকারি স্কুল হলেও এই স্কুলে লেখাপড়ার খরচ প্রাইভেট স্কুলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাদের অভিযোগ, স্কুলটি এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরপর হঠাৎ করেই দুই বছর ধরে সব কাগজপত্রে নিজে ‘প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে স্বাক্ষর করছেন। শিক্ষা অফিসও এ বিষয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি বলে জানা গেছে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তা কুয়াকাটায় আসেন, তাদের জন্য অনেক সময় রুম পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট হাউস হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনো সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেয়া হয় না। বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমকে গেস্ট হাউস বানানোর আইনত কোনো ভিত্তি আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা এ বিষয়ে বলেন, স্কুলের ক্লাসরুমে গেস্ট হাউস বানিয়ে ভাড়া দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় খলিলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি রোববার জানতে পেরেছি। সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে বি বি গেস্ট হাউস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply